ফেসবুক লাইভে এসে গুলি করে আত্মহত্যা করা আবু মহসিন খানের মরদেহের পাশে একটি ‘সুইসাইড নোট’ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ছাড়া পিস্তলের লাইসেন্স ও কাফনের কাপড় পাওয়া যায়।
বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে ফেসবুকে লাইভে এসে আত্মহত্যা করেন ৫৮ বছর বয়সী আবু মহসিন খান।
তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী ও চিত্রনায়ক রিয়াজের শ্বশুর। ইতিমধ্যে তার আত্মহত্যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
এ বিষয়ে রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান বলেন, “তার (মহসীন) স্ত্রী এবং ছেলে অস্ট্রেলিয়া থাকেন। ধানমন্ডির বাসায় তিনি একা থাকতেন। উনি ২০১৭ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হন, এছাড়া ব্যবসায় তার বড় ধরনের লোকসান হয়। এসব কারণে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন বলে পুলিশের ধারণা।”
সাজ্জাদুর রহমান আরও বলেন, “মহসিন খানের সুইসাইড নোটে লেখা রয়েছে, ব্যবসায় ধস নেমে যাওয়ায় আমি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। আমার সঙ্গে অনেকের লেনদেন ছিল। কিন্তু তারা কেউ টাকা দেয়নি। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।”
এর আগে ২০১৭ সালে মহসিন খান ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
ওই ভবনের কেয়ারটেকার মো. গোলাম রাব্বী বলেন, “নিহত মহসিন চিত্রনায়ক রিয়াজের শ্বশুর। তার মেয়ে রিয়াজের স্ত্রী বনানীতে থাকেন। মৃত্যুর খবর শুনে তারা আসছেন।”
১৩ তলাবিশিষ্ট ওই ভবনের ৫ তলার একটি ফ্লাটের মালিক মহসিন জানিয়ে গোলাম রাব্বী বলেন, “তিনি ওই বাসায় একা থাকতেন। তার বাসায় কোনো কেয়ারটেকার, কাজের বুয়া ও ড্রাইভার ছিল না। একটা প্রাইভেট কার আছে, তিনি নিজেই চালাতেন। মাঝেমধ্যে বাইরে যেতেন। তবে বেশির ভাগ সময় বাইরে থেকে খাবার আসত।”
এদিকে শ্বশুরের মৃত্যুর খবর শুনে নায়ক রিয়াজ তার স্ত্রীকে নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। পুলিশ কর্মকর্তাদের রিয়াজ বলেছেন, “এ মৃত্যুর বিষয়ে তারা কিছু জানেন না। পুলিশ তদন্ত করে যা পাবে, তার সঙ্গেই তারা একমত পোষণ করবেন।”
এ ছাড়া শ্বশুরের মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের কাছে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন নায়ক রিয়াজ।
আবু মহসিন এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক ছিলেন। বড় ছেলে তার মাকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন।
এ ছাড়া মহসিন খান তার ফেসবুক লাইভে বলেন, “আমি মহসিন। ঢাকায় থাকি। আমার বয়স ৫৮ বছর। কোনো একসময়ে আমি ভালো ব্যবসায়ী ছিলাম। বর্তমানে আমি ক্যানসারে আক্রান্ত। তাই আমার ব্যবসা কিংবা কোনো কিছুই নেই। ভিডিও লাইভে আসার উদ্দেশ্য হলো, মানুষের বাস্তব অভিজ্ঞতা এবং আমার যে এক্সপেরিয়েন্স, সেটা শেয়ার করলে হয়তো সবাই জানতে পারবে, সবাই সাবধানতা অবলম্বন করবে।”
‘গত ৩০ তারিখ আমার খালা মারা যান। তার একটি ছেলে আমেরিকায় থাকে, মা মারা গেল অথচ ছেলেটি আসল না। এটা আমাকে অনেক দুঃখ দিয়েছে। কষ্ট লেগেছে।’
‘আজকে আমার আরেকজন খালা মারা গিয়েছেন। তারও একটি ছেলে আমেরিকায় ছিল। অবশ্য তাঁর তিনটা ছেলে ইঞ্জিনিয়ার। তিনজনই বর্তমানে বাংলাদেশে আছেন। তারা হয়তো দাফন-কাফনের কাজ সম্পন্ন করছে। সেদিক দিয়ে বলব, এই খালা অনেকটা লাকি।’
‘আমার একটামাত্র ছেলে। সে অস্ট্রেলিয়াতে থাকে। আমার বাসায় আমি সম্পূর্ণ একা থাকি। আমার খালা মারা যাওয়ার পর থেকে আমার ভেতরে খুব ভয় করছে। আমি যদি আমার বাসায় মরে পড়েও থাকি, আমার মনে হয় না যে এক সপ্তাহ কেউ জানতে পারবে, আমি মারা গেছি।’
‘ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী-যাদের জন্য যা-ই কিছু আমরা করি। আমরা সবকিছু করি সন্তান এবং ফ্যামিলির জন্য। আপনি যদি এক শ টাকা ইনকাম করেন, আয় করেন; তার টোয়েন্টি পারসেন্ট টাকাও আপনি নিজের জন্য ব্যয় করেন না। যদি টোয়েন্টি পারসেন্ট টাকা আপনি নিজের জন্য ব্যয় করেন, তাহলে ৮০ পারসেন্ট টাকা আপনার ফ্যামিলির জন্য ব্যয় হয়।’
‘গত করোনা শুরুর আগে থেকে আমি বাংলাদেশে আছি। একা থাকা যে কী কষ্ট-যারা একা থাকেন, তাঁরাই একমাত্র বলতে পারেন বা বোঝেন।’
‘যাদের জন্য আমি বেশি করছি, প্রত্যেকটা লোকের কাছে আমি প্রতারিত হয়েছি। আমার এক বন্ধু ছিল, নাম কামরুজ্জামান বাবলু। যাকে আমি না খেয়ে তাকে খাইয়েছি। সে আমার ২৩ থেকে ২৫ লাখ টাকা মেরে দিয়েছে।’